নিজস্ব প্রতিকদক, ঢাকা : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অদ্য উত্তর বঙ্গের মরুকরণ রোধে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গুরুত্ব শীর্ষক” এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদত।
সাধারণ সম্পাদক এড. মো. আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা গেরিলা লিডার ড. এস. এম শফিকুল ইসলাম কানু, মাহবুব সিদ্দিকি, এড. খন্দকার আমিনুল হক টুটুল, মো. ইকরাম এলাহী খান সাজ, নদী গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, ড. মো. মহসীন আলী মন্ডল প্রিন্স, কে এম এ মহি উদ্দিন মানিক বীরপ্রতিক, মিহির বিশ্বাস, রফিকুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. বোরহান উদ্দিন অরণ্য, মো. কালিমুল্লাহ ইকবাল, অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম লিন্টু, এড. মো. শহিদুল্লাহ, মো. বসির উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শামীম আহমেদ দেওয়ান, সাহিত্য সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মো. হাসিবুল হক পুনম, প্রেস মিডিয়া সম্পাদক আনিসুর রহমান খান, জীব বৈচিত্র সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হাছিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর সভাপতি মহসীনুল করিম লেবু, গাজীপুর মহানগর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ,পাবনা জেলা সভাপতি কে এম নাজমুল হক, ঢাকা জেলা সভাপতি এডভোকেট মো. মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি কবি জামান ভূঁইয়া, গাজীপুর জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক এস এম মনির উদ্দিন, পুষ্টিবিদ আলমগীর আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য শামীম মোহাম্মদ, সাংবাদিক আ. মালেক আজম খান, সাংবাদিক জাহিদুর রহমান বকুল, এড. আলী আজম সুমন, এড. শাহ আলম মোল্লা, মো. মিজানুর রহমান খান।
সভায় বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদত বলেন, রংপুর বিভাগের ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য ১৯৭৯ সালে ১০ হাজার কিউসেক পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন তিস্তা সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় কিন্তু তিস্তা ব্যারেজের ৬০ কিলোমিটার উজানে ১৯৯৮ সালে ভারতের জলপাইগুড়ির গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে সেচ খালে ৫০০ কিউসেক পানিও থাকেনা। ফলে সেচ সুবিধা না থাকায় খরার কারণে ফসল উৎপাদন তলানিতে নেমে এসেছে। অন্য দিকে বর্ষাকালে হঠাৎ করে গজল ডোবা বাঁধের সবগুলো গেট যখন খুলে দেয়া হয়, তখন তিস্তা ভয়ংকর রুপ ধারণ করে অকাল বন্যা ও ভাঙ্গনে তিস্তা পাড়ের প্রায় ২ কোটি মানুষকে ভয়াবহ দুর্যোগে নিমজ্জিত করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সারা বছর যেন তিস্তাতে পানি থাকে, সেচ প্রকল্প সচল রাখা যায়, দুই পাড়ে পরিকল্পিত শহর-বন্দর, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা যায়, নৌ চলাচল অব্যাহত রাখা যায়, এজন্য ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিস্তার বিস্তৃতি কমিয়ে প্রকল্প নকশানুযায়ী দেড় বা দুই কিলোমিটার করা হবে। (তবে আমাদের দাবি বিস্তৃতি যেন দুই থেকে তিন কিলোমিটার করা হয়)। গভীরতা ১০ মিটার বৃদ্ধি করা হবে। ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ ও ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে এক বিলিয়ন ডলার খরচ হলেও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হবে। ১০ লক্ষের অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, সর্বোপরি বন্যা ও খরার প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে, ভুগর্ভস্থ শুণ্য স্থানে পানি রিচার্জ হবে, উত্তর বঙ্গ মরু করণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সভায় বক্তারা বলেন, গত বছরের ২ আগষ্ট রংপুর সফরে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে এসেছিলেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি, উত্তর বঙ্গের মানুষের দাবি, সর্বোপরি সারা দেশের মানুষের দাবি। বক্তারা বলেন, এ ধরণের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক বাঁধা-বিপত্তি থাকে, সীমাবদ্ধতা থাকে। সেগুলোকে অতিক্রম করেই সরকারকে দ্রুত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগুতে হবে। কেননা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর এটাকে একটা মডেল হিসেবে নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া বেশ কিছু নদীতে যেমন পঞ্চগড়ের করতোয়া, বেরং, গোবরা নদী, কুষ্টিয়ার গড়াই নদ, পাবনার বড়াল নদ, ময়মনসিংহের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, সিলেট অঞ্চলের যাদুকাঁটা, সুরমা বা কুশিয়ারা নদীতে এ ধরণের পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব হতে পারে।
বক্তারা আরো বলেন, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ওপর বসে থাকলে চলবে না। মরুকরণ থেকে বাঁচতে অভ্যন্তরীণভাবে কিভাবে সারা বছর তিস্তাসহ সকল নদীতে পানি রাখা যায়, নৌ চলাচল অব্যাহত রাখা যায়, সেটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বিদ্যমান যে দশ লক্ষের অধিক পুকুর দীঘি এবং ৩ হাজারের অধিক বিল জলাশয় রয়েছে এ গুলোকে রক্ষা করতে হবে।
সম্পাদক : অধ্যাপক আনোয়ার সাদত